হারিয়ে যাচ্ছে মক্তব শিক্ষা, এক সময়ের মুখর আঙিনা এখন নিরব
- আপলোড সময় : ০৬-১০-২০২৫ ০৮:৩১:০১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১০-২০২৫ ১১:২১:৩৬ পূর্বাহ্ন

আশিস রহমান :: একসময় ভোরের শিশির ভেজা পায়ে টুপি পড়ে কিংবা মাথায় উড়না দিয়ে আমপাড়া কায়দা-সিপারা হাতে মসজিদে ছুটে আসতো গ্রামের প্রতিটি ঘরের শিশু-কিশোররা। আলিফ জবর আ, বা জবর বা, তা জবর তা.. এরকম উচ্চারণে মুখরিত হতো মক্তবের আঙিনা। গ্রাম বা পড়া-মহল্লার মসজিদ কেন্দ্রিক এসব মক্তবই ছিলো শিশুদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ভিত্তিমূল। শিশু-কিশোররা হুজুরের কাছে শিখত কোরআন, কালেমা-নামাজ, ওজু-গোসলের নিয়ম, হাদিসসহ নৈতিক ও মানবিকতার শিক্ষা। ফজরের নামাজের পর থেকেই শিশুদের পদাচরণায় সরব হয়ে উঠত মক্তবের আঙিনা। অথচ এখন সেই প্রাণচঞ্চল আঙিনা দিন দিন ক্রমেই নিরব হয়ে যাচ্ছে। আধুনিকতার ছোঁয়া, তথ্যপ্রযুক্তির আসক্তি, কোচিং নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা ও অভিভাবকদের অনাগ্রহে মক্তব শিক্ষা এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। দোয়ারাবাজার উপজেলার আলীপুর হযরত আলী (রা.) জামে মসজিদ। এই মসজিদের মক্তবে এক সময় শতাধিক শিশু পড়াশোনা করত। এখন এই সংখ্যা কমে দাড়িয়েছে ৩০-৪০ জনে। শুধু এই মসজিদের মক্তবেই নয়, উপজেলার প্রায় সবকটি মসজিদের মক্তবেই শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। আলীপুর হযরত আলী (রা.) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মনোয়ার হোসেন বলেন, এখনকার সময়ে শিশুদের দিন কাটে স্কুল, কোচিং ও প্রাইভেট ক্লাসে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন, টিভি ও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তির কারণে শিশুরা রাতে দেরিতে ঘুমাচ্ছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে পারছেনা যা তাদের মক্তব থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এছাড়াও অনেক অভিভাবকও সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি উদাসীন। উপজেলার টেংরাবাজার মার্কাজ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা বদিউজ্জামান বলেন, আগে ভোরবেলা মক্তবের শিশুরা কোরআন তেলাওয়াত করত, সেই সুর গোটা গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে যেত। এখন মক্তব প্রায় খালি পড়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্ম নৈতিকভাবে দিশাহারা হয়ে পড়বে। অভিভাবকরা জানান, একটা সময় ছিলো যখন অভিভাবকরা ফজরের নামাজ পড়ে বাড়িতে গিয়ে শিশুদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মক্তবে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের বেশির ভাগ অভিভাবকরাই ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়ে উদাসীন ও অসচেতন। ফলে মক্তব শিক্ষার জৌলুস হারিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সমাজে। ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে অনেক শিশু এখন মৌলিক ইসলামী জ্ঞান থেকেও বঞ্চিত। নামাজ, অজু কিংবা ইসলামের মৌলিক আদব-কায়দা স¤পর্কেও তাদের অজ্ঞতা বাড়ছে। মূল্যবোধের সংকটও দেখা দিয়েছে। অভিভাবক দিন ইসলাম বলেন, আমাদের শৈশব কেটেছে মক্তবের আঙিনায়। আমরা মক্তবে বসে ভোরের সূর্যোদয় দেখেছি। আর এখনকার শিশুরা তো সকালের সূর্যই দেখে না। মক্তব শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করা এখন জরুরি। উপজেলার বোগলা রোসমত আলী রামসুন্দর স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটি মসজিদে শিশুদের জন্য মক্তব বাধ্যতামূলকভাবে চালু করা, অভিভাবকদের সচেতন করা এবং সরকারিভাবে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মক্তব শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নৈতিক ভিত্তি হারাবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ